সর্বশেষ পোষ্টগুলো

শনিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৩

বৈদেশিক মুদ্রার বাজার - ফরেক্স ( টিউটোরিয়াল ) - ৩

কারেন্সি ট্রেডিং বেসিক কনসেপ্ট

মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একটু দরকারি কথা বলে নেয়। ধারাবাহিকভাবে বিডি ফরেক্স প্রফেশনাল এর টিউন গুলো শেষ করুন কারন আমি টিউন গুলো এমন ভাবে করছি যাতে করে আপনি শেখার ক্ষেত্রে মিসগাইড না হোন অর্থাৎ কোন বিষয় গুলোর পর কোন বিষয় গুলো জানতে হবে, সেটি মাথায় রেখেয় আমি টিউন করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ভিবিন্ন রকম ফরেক্স রিসোর্স সাইট ভিজিট করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারন যত বেশি রিসোর্স আপনি টাচ রাখবেন তত ভালো ট্রেডার রুপে গড়ে উঠবেন। তাড়াহুড়ো করার কোন দরকার নাই, আস্তে আস্তে প্রসিড হোন, একটু সময় নিয়েই এগুতে থাকুন আপনি অবশ্যই ভালো করবেন, কারন তাড়াহুড়ো কিংবা অতি মাত্রার উৎসাহ আপনার খতির মূল কারন হতে পারে। তাই বারবারই একটা কথার উপর বেশি বেশি নজর দিচ্ছি, তা হল প্রথমে শিখুন, শিখুন এবং শিখুন !  আর প্রশ্ন করতে চাইলে কিংবা যদি ট্রেডারদের সাথে আপনার কোন সমস্যা বিষয়ক আলোচনা করে সমাধান নিতে চান তাহলে আপনার আলোচনা শুরু করুন।
যারা পূর্বের পর্বগুলো পড়েননি তারা চাইলে  পূর্বের পর্বগুলো পড়ে ধারাবাহিকতা রাখতে পারেন।

কারেন্সিঃ  বেসিক ট্রেডিং কনসেপ্ট

ফরেক্স আপনি যেসব শেয়ার/স্টক ক্রয় করছেন তা মুদ্রায় পূর্ণ নামে ডাকা হয় না, প্রত্যেকটি কারন্সিকে তিনটি রেফারেন্স কোড (ISO Code) এর মাধ্যমে ডাকা হয়। এইক্ষেত্রে প্রথম দু’টি কোড হল ঐ দেশের নামের সংক্ষিপ্ত রুপ এবং ৩য় কোডটি হল ঐ দেশের মুদ্রার/কারেন্সির প্রথম অক্ষর। যেমনঃ United (U) States (S) Dollar (D)  = USD. Great (G) Britain (B) Pound (P)= GBP
ফরেক্স মার্কেটে প্রত্যেকটি কারন্সি এককভাবে না থেকে জোড়ায় জোড়ায় থাকে তার কারন একটির বিপরীতে আরেকটি এক্সচেঞ্জ করার জন্য।

জোড়ার প্রথম কারেন্সিকে Base কারেন্সি এবং দ্বিতীয় কারেন্সিকে Quote/Counter/Ref/Term কারেন্সি বলা হয়।
কারেন্সির ধরন এর উপর ভিত্তি করে এগুলোকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে হয়েছেঃ

Major কারেন্সিঃ

বলা হয় ঐ সকল কারেন্সি জোড়াকে যেসকল কারেন্সি জোড়ার সাথে USD কারেন্সিটি থাকবে এবং সবচেয়ে বেশি পরিমান ট্রেড হয় যেসকল কারেন্সিতে। মেজর কারেন্সি Base অথবা Quote যেকোন ভাবে থাকতে পারে। যেমনঃ



তবে ৩টি কারেন্সি আছে যেগুলোকে মেজর কমোডিটি (Major Commodity) কারেন্সিও বলা হয়, কারেন্সিগুলো হলঃ
  • ১। USD/CAD
  • ২। AUD/USD
  • ৩। NZD/USD


    ক্রস কারেন্সিঃ

    আর যেসকল কারেন্সি পেয়ার এর সাথে USD কারেন্সিটি থাকবে না সেসকল কারেন্সি পেয়ারকে ক্রস কারন্সি বলা হয় এবং এ কারেন্সি গুলোতে ট্রেড এর পরিমান ও মেজর কারেন্সির তুলনায় কিছুটা কম। যেমনঃ



ডিরেক্ট কৌওট (Direct Quote):

আপনি যেদেশের ট্রেডার সেই দেশের কারেন্সি হল আপনার জন্য লোকাল কারেন্সি, হোম বা ডোমেস্টিক কারেন্সি। ডিরেক্ট কৌওটে বেস কারেন্সিই হল লোকাল বা ডমেস্টিক কারেন্সি। এইক্ষেত্রে ১ ইউনিট ফরেন/ইন্টারন্যাশনাল কারেন্সি ক্রয়ের জন্য আপনার কত ইউনিট লোকাল কারেন্সি দরকার তা-ই বোঝায়। যেমন একজন ইউ.এস ট্রেডার যদি কানাডিয়ান ডলারের সাথে ট্রেড করে তাহলে পেয়ারটি হবে USD/CAD. তাহলে ১ ইউনিট কানাডিয়ান ডলারের জন্য ০.৮৫০৫ ইউ.এস ডলারের প্রয়োজন ।
ডিরেক্ট কৌওট কারেন্সিঃ
  • - USD/JPY
  • - USD/CAD
  • - USD/CHF

ইন্ডিরেক্ট কৌওট (Indirect Quote):

হল ১ ইউনিট লোকাল কারেন্সি ক্রয়ের জন্য কত ইউনিট ফরেন কারেন্সি দরকার। ইন্ডিরেক্ট কৌওটে ফরেন কারেন্সি হল বেস কারেন্সি। অর্থাৎ CAD/USD হল ইউ.এস ট্রেডারের জন্য ইন্ডিরেক্ট কৌওট তাহলে ১ ইউনিট ইউ.এস ডলারের জন্য ১.১৫০০ ইউনিট কানাডিয়ান ডলার প্রয়োজন।
 ইনডিরেক্ট কৌওট কারেন্সিঃ
  • - EUR/USD
  • - GBP/USD
  • - AUD/USD

কারেন্সি পেয়ারঃ

একটু আগে বলেছি যে ফরেক্স মার্কেট এ প্রত্যেকটি কারেন্সি জোড়ায় থাকে, আসুন আইবার পরিষ্কার হওয়া যাক কেন ?
আমাদের বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট এর যেকোন শেয়ার এর মূল্য টাকায় নির্ধারিত হয়, অর্থাৎ যেকোন দেশের শেয়ার এর মূল্য সেদেশের মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হয়। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে কোন শেয়ার এর মূল্য সেদেশের মুদ্রার বিপরীত নির্ধারিত হয় না । ফরেক্স মার্কেটে এটা সম্ভব নয়। ফরেক্স মার্কেটে একটি মুদ্রার অনেক গুলো দেশভিত্তিক অনেক রকম হবে, যেমন 1 USD ক্রয় করতে হলে বাংলাদেশে বর্তমানে ৮০ টাকা লাগবে, ইউরো দিয়ে ক্রয় করলে প্রায় .৮০ ইউরো লাগবে অথবা ১.১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার লাগবে । এখন তাহলে বলুন ডলারের মূল্য আসলে কোনটি ? এই জন্য ফরেক্স মার্কেট কারেন্সি পেয়ার এর মাধ্যমে ট্রেড হয়, থাকে যাতে করে যেদেশের মানুষ সে দেশের মুদ্রার মূল্য শেয়ার পেতে পারে।
উধহারন সরুপঃ
যদি EUR/USD = 1.3035 থাকে তাহলে বুঝতে হবে, ১ EUR ক্রয় করতে আপনার 1.3035 USD প্রয়োজন হবে।
যদি USD/JPY = 77.87  থাকে তাহলে বুজতে হবে, ১ USD ক্রয় করতে  আপনার 77.87 JPY প্রয়োজন হবে।

পিপসঃ

পিপস এর বিস্তৃত রপ হল পারসেন্টেজ ইন পয়েন্ট (Percentage in Point) । ফরেক্স মার্কেটে কারেন্সি রেইট এর ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনই হল পিপ। আরো সহজ করে বললে দশমিক এর পরে চতুর্থ সংখ্যার প্রতি একক এর পরিবর্তনই হল পিপ।  অর্থাৎ কোন কারেন্সি রেইট যদি ১.২৫০০ থেকে পরিবর্তন হয়ে ১.২৫১০ এ যায় তাহলে খেয়াল করুন, ১.২৫০০-১.২৫১০ = ১০ পয়েন্ট এর একটি ব্যাবধান ঘটেছে আর এই ১০ পয়েন্টের পরিবর্তনই মানে হলে ১০ পিপস।
উদহারন EUR/USD বর্তমান পাইস 1.3550 কিছুক্ষণ পর তা হল  1.3555
তাহলে কি দাড়াল ? = 1.3550 to 1.3555 = 5 , মানে ৫ পয়েন্টস বা পিপস বৃদ্ধি পেল।

উদহারন   GBP/CHF বর্তমান পাইস 1.5245 কিছুক্ষণ পর তা হল  1.5240
তাহলে কি দাড়াল ? = 1.5245 to 1.5240 = 5 , মানে ৫ পয়েন্টস বা পিপস কমে গেল।

পিপেটিঃ

মাইক্রো লট ব্রোকারে ট্রেড করার সময় খেয়াল করবেন সেখানে কারন্সি রেইট এর ক্ষেত্রে দশমিক এর পরে ৫ সংখ্যা পাবেন, এইরূপ ক্ষেত্রে ৫ম সংখাটি হল পেপেটি। কনফিঊসড হওয়ার কোন কারন নাই। পরবর্তী লট আলোচনায় তা পরিষ্কার বুজতে পারবেন।
ছবিটি লক্ষ্য করুন দশমিক এর পড়ে ৫ম ডিজিট হল ফ্রেকশনাল পিপস বা পিপেটিস

 যেমনঃ ১.২৫৫০১ থেকে যদি পরিবর্তন হয়ে ১.২৫৬০১ হয় তাহলে বুজতে হবে ১০০ পিপেটিস পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ ১০ পিপস এর পরিবর্তন হয়েছে।

লটঃ

ফরেক্স লট হল আপনার ট্রেডের সাইজ বা আপনার কারেন্সির পরিমান যা দিয়ে আপনি বায় অথবা সেল করবেন। অর্থাৎ আপনি যখন ট্রেড আরম্ভ করবেন তখন আপনার ট্রেড ওপেন এ পিপস ভেলু যে হারে নির্ধারিত হবে তাই লট। ফরেক্স ট্রেড এর সুবিধা অনুযায়ী ৩ ধরনের লট নির্ধারণ করা হয়েছে।
১। স্ট্যান্ডার্ড একাউন্ট             ১ লট   = $১০ প্রতি পিপস
২। মিনি একাউন্ট                 ১ লট   = $১ প্রতি পিপস
৩। মাইক্রো একাউন্ট             ১ লট   = $০.১০ প্রতি পিপস
অর্থাৎ আপনি যদি স্ট্যান্ডার্ড লট সাইজে ট্রেড করেন তাহলে প্রাইস যদি আপনার অনুকুলে ১০ পিপস যায় তাহলে আপনার লাভ হবে ১০X$১০= $১০০। অনুরপ পাইস আপনার প্রতিকুলে ১০পিপস গেলে আপনার লস ও হবে $ ১০০।
মিনি লট এ যদি ট্রেড করেন প্রাইস যদি আপনার অনুকুলে ১০ পিপস যায় তাহলে আপনার লাভ হবে ১০X$১= $১০। অনুরপ পাইস আপনার প্রতিকুলে ১০পিপস গেলে আপনার লস ও হবে $ ১০।
এবং মাইক্রো লট এ যদি ট্রেড করেন প্রাইস যদি আপনার অনুকুলে ১০ পিপস যায় তাহলে আপনার লাভ হবে ১০X$.১০= $১। অনুরপ পাইস আপনার প্রতিকুলে ১০পিপস গেলে আপনার লস ও হবে $ ১।

ব্রোকার ভিত্তিক লট সাইজ এবং পিপস ভেলুঃ

ফরেক্সে যেমন বড় ইনভেস্টর আছে তেমনি আছে ক্ষুদে ইনভেস্টর ও , সকল শ্রেণীর মানুষ তথা যার কাছে যে পরিমান মূলধন আছে ট্রেড করার জন্য সে যাতে সে পরিমান মূলধন দিয়ে নিরাপদে ট্রেড করতে পারে সে জন্য ব্রোকাররা ভিবিন্ন রকম একাউন্ট টাইপ এর মাধ্যমে ট্রেডার জন্য সে সুবিধা নিশ্চিত করেছে। ব্রোকারদের লট সাইজ হিসেবে একাউন্টগুলো হলঃ
স্ট্যান্ডার্ড লট ব্রোকারঃ
 ১          স্ট্যান্ডার্ড লট = $১০/পিপস
০.১      স্ট্যান্ডার্ড লট = $১/পিপস
০.০১   স্ট্যান্ডার্ড লট = $০.১০/পিপস
 মিনি লট ব্রোকারঃ
 ১        মিনি লট = $১/পিপস
০.১      মিনি লট = $০.১০/পিপস
০.০১   মিনি লট = $০.০১/পিপস
মাইক্রো  লট ব্রোকারঃ
১          মাইক্রো লট = $০.১০/পিপস
০.১      মাইক্রো লট = $০.০১/পিপস
০.০১    মাইক্রো লট = $০.০০১/পিপস

স্প্রেডঃ

বিড এবং আস্ক রেইট এর মধ্যবর্তী পরিবর্তনই হল স্প্রেড। এটি মুলত ব্রোকারের কমিশন বা চার্জ । বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ার এবং ব্রোকার ভেদে স্প্রেড কম-বেশি হতে পারে। তবে কমন কারেন্সি এবং এভারেজ স্প্রেড সাধারণত ২-৩ পিপস এর মধ্যে থাকে।
খেয়াল করবেন আপনি যখন কোন একটা রেইট এ অর্ডার মেইক করেন, দেখবেন সাথে সাথে ৩ (কারন্সি ভেদে কম বেশি ) পিপস মাইনেস এ থাকে।


 উদহারনঃ  ধরি আপনি $১ পিপ ভেলু দিয়ে ১.৩৭৫৫ এ একটি বায় অর্ডার করেছেন এখন যদি এই ট্রেড থেকে আপনি $৫ লাভ করতে চান তাহলে আপনার অর্ডার রেইট থেকে ৮ পিপস বেড়ে (৩ পিপস স্প্রেড) ১.৩৭৬৩ তে আসতে হবে। এভাবেই আপনার ট্রেড গুলো সম্পূর্ণ হবে বিভিন্ন কারন্সি ভেদে বিভিন্ন স্প্রেড রেইটে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন